ইমরান খানকে কেন পাকিস্তানে ক্ষমতা থেকে সরতে হোল?
ইমরান খানকে কেন পাকিস্তানে ক্ষমতা থেকে সরতে হোল, সে ব্যাপারে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। খান অভিযোগ করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তার অপসারণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এই অভিযোগ কূটনৈতিক নিয়ম অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সত্য নয় বলেছে। এটা তো যথারীতি বলতেই হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বলবে যে ঠিক ঠিক, আমরাই ইমরান খানকে সরিয়েছি!
এরপর বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ডিজি আইএসপিআর বাবর ইফতিখার ইমরান খান বিবৃতি দিয়েছেন। সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য “বিদেশী ষড়যন্ত্র” এবং সেইসাথে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার বিষয়টি যথারীতি সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি রক্ষার নিয়ম অনুযায়ী তিনি স্পষ্টভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
সেনাবাহিনীর বিবৃতি সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইসকে এ বিষয়ে ১৫ এপ্রিল শুক্রবার প্রশ্ন করা হয়। যথারীতি নেড প্রাইস সেনাবাহিনীর বিবৃতির সাথে একমত পোষণ করেছেন। করতেই তো হবে, তাই না? ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য “বিদেশী ষড়যন্ত্র” সম্পর্কে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে একমত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদের কাছ থেকে একটি কূটনৈতিক তারে পাঠানো “হুমকির চিঠি” অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করেছিলেন যে ইমরান খান যদি বর্তমান পদে অব্যাহত থাকেন তাহলে পকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। ইমরানের “স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি” এবং মস্কো সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতি বিরক্ত বলে জানা গেছে। ‘হুমকির চিঠি’ সত্য নাকি অসত্য সেটা গৌণ প্রসঙ্গ, আমার কাছে তর্কের বিষয় না, তাই উদ্ধৃতি চিহ্ন’ দিয়েছি। কারণ লক্ষ্য করেছি ভারতে ইমরান খান ও পাকিস্তান বিদ্বেষীরা একেই প্রধান বিষয় বানিয়ে প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে অন্য রাষ্টের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেটা আড়াল করা যায়।
এই বলাবলি বা স্বীকার-অস্বীকার কোন সমস্যা না। কূটনীতি। সত্য অন্যত্র।
সেনাবাহিনীর তরফ থেকে বলা যেমন জরুরী, কূটনৈতিক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেো অভিযোগ অস্বীকার করতেই হবে। কিন্তু নেড প্রাইস দাবি করছেন , “আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক নীতি উর্ধে ধরে রাখার চেষ্টা করি। পাকিস্তান বা বিশ্বের অন্য কোথাও একটি রাজনৈতিক দলের ওপর অন্য আরেকটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না”।
হা হা হা হা। এখন আপনি হাসতে পারেন।
এই দাবি সমস্যাসংকুল। আগাগোড়াই মিথ্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত ভাবেই অন্য দেশে তাদের অপছন্দের সরকারকে সহিংস অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যূত করে, আর অন্য দেশের নির্বাচন যখনই তাদের স্বার্থের বিপরীতে যায় মনে করে তখনই হস্তক্ষেপ করে।
এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ গণমাধ্যম কি বলে সেটা শোনা যাক।
১৯৪৬ থেক ২০০০ সালের একটা হিশাবে এই ভিডিও উল্লেখ করছে ৮০ দেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করেছে। এই হিশাব অভ্যূত্থান, সরকার বদল, ‘রেজিম চেইঞ্জ’ — সেইসব বাদ দেয়ে হিশাব।
এই ভিডিওর সবচেয়ে অশ্লীল দিক হচ্ছে সি আই এ ডিরেক্টর জেইমস উলসির ফক্স নিউজে সাক্ষাৎকার। অন্যদেশের নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোলমাল পাকায় কিনা সেই প্রশ্নে তার মুখে চাপা উল্লাস ও বিকৃত হাসি।
বাকিটুকু বুঝে নিন। দেখুন এবং মনে রাখুন।
ফরহাদ মজহার